আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি মাছ চাষ সম্পর্কে জানুন,

 গলদা চিংড়ি বিশ্বে Giant Fresh Water Prawn নামে পরিচিত। সাধারণত গলদা চিংড়ি সাধু জল ও হালকা লবণ যুক্ত জলে ভালোভাবে চাষ করা যায়। গলদা চিংড়ি অত্যন্ত লোভনীয় এক খাবার। মাছ বাজারে এর চাহিদা অনেক বেশি। কৃষকদের চিংড়ি চাষে আর্থিক উন্নতি ঘটে।


পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ির উৎপাদন প্রতি একরে ১২০০ থেকে২৫০০ কেজি হয়েছে। অনেকেই গলদা চিংড়ি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। চলুন এখন আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি মাছ চাষ সম্পর্কে জানব।

পোস্ট সূচিপত্রঃ আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি মাছ সম্পর্কে জানুন,

  • পুকুর প্রস্তুত
  • পোনা প্রস্তুত
  • চিংড়ি চাষ পদ্ধতি
  • মিশ্র চাষ পদ্ধতি
  • খাদ্য প্রস্তুত
  • গলদা চিংড়ি চাষে লাভজনক

পুকুর  প্রস্তুত

অন্যান্য মাছ চাষের মতো গলদা চিংড়ি মাছ চাষের আগে পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হবে। পুকুরের তলাতে বেশি কাদা জমতে দেওয়া যাবে না। পুকুর প্রস্তুতি করার সময় পুকুরে ১ থেকে ২ কেজি চুন দিতে হবে। পুকুরে চুন প্রয়োগ করে চুন পানিতে মেশার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর পুকুরে আলো বাতাস পর্যাপ্ত পরিমাণ মানে চলাচলের জন্য পুকুরের আসে পাশে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর পুকুরে থাকা অতিরিক্ত পোকামাকড় ও রাক্ষসী মাছ রেটেনন দিয়ে নিধন করতে হবে। মজুদ পুকুরে ৪ থেকে ৫ ফিট পানি রাখা উচিত।


 পানির গভীরতা বেশি হলে পানিতে অক্সিজেনের সমস্যা হতে পারে এবং কম হলে পানি সূর্যের আলোতে গরম হয়ে যেতে পারে অতিরিক্ত। তাই মাঝামাঝি পানি রাখতে হবে পুকুরে। মাছ চাষের প্রয়োজনীয় বিষয় হলো পুকুর। মাছ চাষের আগে ভালোভাবে পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হবে। পুকুর প্রস্তুত ভালো হলো মাছ ভালো জন্মে। এবং অধিকারের মাছ পাওয়া যায়। তাই আমাদের মাছ চাষের সর্বপ্রথম আগে পুকুর প্রস্তুত বেশি প্রয়োজন। আর এই মাস সারা বছর চাষ করা যায়,

পোনা  প্রস্তুত 

এতক্ষণ আমরা পুকুর প্রস্তুত সম্পর্কে জানলাম এখন আমরা পোনা প্রস্তুত সম্পর্কে জানব, চলুন তাহলে জেনে নিন কিভাবে পোনা প্রস্তুত করতে হয়। প্রাকৃতিক উৎস হিসেবে নদী বা সাগরের মোহনা থেকে গলদার পোনা সংগ্রহ করা যায়। এছাড়াও হ্যাচারিতে উৎপাদিত গলদার রেনু ও পাওয়া যায়। এবং বছরের শেষের দিকেও সেপ্টেম্বর অক্টোবর এর দিকে এই গলদার রেনু পাওয়া যায় ।গলদা চিংড়ির পোনা সংগ্রহ করার পর। পুকুরে ছাড়ার একদিন আগে সংগ্রহ করতে হবে।

চিংড়ি চাষ পদ্ধতি

 আমরা পোনা প্রস্তুত সম্পর্কে জানলাম। এখন আমরা চিংড়ি চাষ সম্পর্কে জানব। পুকুর প্রস্তুত করার পর পোনা প্রস্তুত প্রস্তুতির পর এখন চিংড়ি চাষ করতে হবে।

চিংড়ি মাছ সাধারণত দুই ভাবে চাষ করা যায়

এক হলোঃ একক চাষ ও দুই হলোঃ মিশ্র চাষ।

গলদা চিংড়ি অর্থনৈতিকভাবে অনেক উপকারী তাই গলদা চিংড়ি মাছ কে এককভাবে চাষ করা হয়। এক চাষ পদ্ধতি স্বাভাবিকভাবে প্রতি শতকে ১০০ থেকে ১১০টি গলদা পোনা মজুদ করা যায়। ছাড়াও শতকে ২০০ থেকে ৩০০ পোনা মজুদ করা যেতে পারে। এভাবে মিশ্র চাষে পোনা মজুদ করতে হয়। আর একক চাষে প্রতি একরে উৎপাদন ৪০০ থেকে ৫০০ কেজি হয়ে থাকে। তবে গলদা চিংড়ি এককভাবেই চাষ করা হয়। এতে গলদা চিংড়ি অনেক ভালো জন্মে এমন ভাবে গলদা চাষ করলে কখনো কখনো ৪০০ থেকে ৫০০ কেজি ও বেশি মাছ পাওয়া যায়।

মিশ্র চাষ পদ্ধতি

এখন আমরা জানবো মিশ্র চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে,মিশ্র চাষ ও গলদা চিংড়ি মাছ চাষ করা যায়। মিশ্র চাষেও গলদা চিংড়ির সঙ্গেও কাতলা  ,রুই , সিলভার কাপ , মাছ চাষ করা যায়। মিশ্র চাষ পদ্ধতিতে প্রতি শতকে ৭০ থেকে ৮০ টি চিংড়ি ও কাপ জাতীয় মাছ ৩থেকে ৪ টি পোনা মজুদ করা হয়। যেহেতু চিংড়ি অনেক দামি মাছ এদের খাদ্যগুলো না অনেক দামী হয়ে থাকে। তাই গলদা চিংড়ির সঙ্গে এমন মাছ দিতে হবে যে মাছগুলো অনেক দামি ও বাজারজাত এ অনেক দাম।


 গলদা চিংড়ি পোনার সঙ্গে ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের রুই কাতলা মাছ দিতে হবে। এগুলো চিংড়ি চাষ সংগ্রহ কালীন সময় প্রায় ৩-৩.৫কেজি আকারে হয়ে থাকে। গলদা চিংড়ির মিশ্র চাষে এমন কোন মাছ দেওয়া যাবে না যে মাছগুলো গলদা চিংড়ি মাছগুলোকে খেয়ে ফেলে এবং যেগুলি্র বাজার মূল্য কম। প্রতি একরে গলদা চিংড়ি মাছ ২০০ থেকে ৩০০ কেজি এবং কাপ জাতীয় মাছ ২০০০ থেকে ২৫০০ কেজি হয়ে থাকে।

আরো পড়ুনঃ খুব সহজে মাশরুম চাষ সম্পর্কে জানুন

খাদ্য প্রস্তুত

 গলদা চিংড়ি চাষে সপ্তাহে প্রতিদিন ভরে রেডি ফিট এবং সন্ধ্যায় দুইদিন সয়াবিন সয়াবিন , তিন দিন ডাবরী ডাল দুই দিন ভুট্টা গম ভিজিয়ে সকালে সন্ধ্যায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। এগুলো পুকুরে তার অভিজ্ঞতা যদি না থাকে তাহলে রেডি ফিট বা অন্য জাতের খাদ্য প্রয়োগ না করাই ভালো। বাণিজ্যিকভাবে ও বড় আয়তনের চিংড়ি চাষের জন্য বাজারে প্রচলিত ভালো কোম্পানির রেডি চিংড়ির ফিট ব্যবহার করার সুবিধা জনক। ছটকা চিংড়ি পুকুরে মজুদ করার পর চিংড়ির ওজনের ৩-৫ % খাদ্য সন্ধ্যা ও রাতে ভরে প্রয়োগ করতে হবে।


 মোট খাবারকে চার ভাগ করে। তিন ভাগ সন্ধ্যায় আর এক ভাগ ভরে দিতে হবে। শতকে ২০০ গ্রাম ডিএপি সার ছিটিয়ে দিতে হবে। ডিএপি সার দিলে চিংড়ির খোলস বদলাতে সুবিধা হয়। মাছগুলো খাবার খেলে কি না পরীক্ষা করার জন্য সপ্তাহে একদিন ট্রেতে খাবার দিতে হবে। ট্রেতে খাবার দেওয়ার পর তিন থেকে চার ঘন্টা পর ট্রে তুলে দেখতে হবে খাবার খেয়েছে কিনা। এভাবে গলদা চিংড়ি চাষে খাবার প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে

গলদা চিংড়ি চাষে লাভজনক

গলদা চিংড়ি মাছ কৃষকদের জন্য অনেক লাভজনক। গলদা চিংড়ি মাছ ভালোভাবে পরিচর্যা করলে অনেক মাছ পাওয়া যাবে। এবং ভালোভাবে খাদ্য প্রয়োগ করলে খুব তাড়াতাড়ি মাছ পাওয়া যাবে। সর্বপ্রথম পুকুর ভালো করে প্রস্তুত করতে হবে। যদি ভালো হবে সবকিছু প্রস্তুত করা হয় তাহলে অবশ্যই মাছ চাষ ভালো হবে। গালদা মাছ চাষ এ এখন বাংলাদেশের কৃষকেরা অনেক সফলতা লাভ করছে। গলদা চিংড়ি বাণিজ্যিক ভাবেও চাহিদা রয়েছে। যার কারণে এটি রপ্তানিতে বেশি লাভবান হচ্ছে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url