টমেটো চাষ সম্পরকে জানুন - এবং টমেটো চাষে এ কিভাবে লাভ জনক হওয়া যাই

 ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি গুনে ভরা এই ফসল শীতকালে চাষ করা হয়। শীতকালে টমেটো চাষ অনেক ভালো হয়। অনেকেই টমেটো চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। টমেটো চাষ পদ্ধতি অনেক সহজ। টমেটোতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও পুষ্ট রয়েছে যার কারণে এটি সকল দেশে পুষ্টিকর সবজি হিসেবে মূল্যায়ন পেয়েছে। 

বাংলাদেশের কৃষকরা শীতকালে টমেটো চাষ করে অনেক সফল হচ্ছেন। টমেটো প্রতিবছর শীতকালে পাওয়া যায়। তাহলে চলুন এখন আমরা জানব কিভাবে টমেটো চাষ করা হয় এবং টমেটো চাষে কিভাবে লাভজনক হয়ে যায়। তাহলে চলুন আমরা দেরি না করে এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিই,

পোস্ট সূচিপত্রঃ টমেটো চাষ সম্পর্কে জানুন এবং-টমেটো চাষে কিভাবে লাভজনক হওয়া যায় তা জানুন,

  • চারা তৈরি করা
  • জমি এবংমাটির প্রস্তুত করা
  • চারা রোপন করা
  • টমেটো চাষ
  •  সার প্রয়োগ পদ্ধতি
  • টমেটো চাষে এ লাভজনক হওয়া

চারা তৈরি করা

সরাসরি জমিতে বীজ ব বুনে ও টমেটো চাষ করা যায়। তবে দ্রুত ফলন পাওয়ার জন্য আলাদা ভাবে চারা তৈরি করে সে চারা মূল জায়গাতে লাগাতে হবে। এর জন্য উঁচু পরিষ্কার রোদ যুক্ত স্থানে বীজতলা স্থাপন করে মাটি চাষ দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হবে। চাষের পর মাটির সমতল করে ১ মিটার চওড়া করে বেড তৈরি করতে হবে। বেড খুব বেশি লম্বা না করে না করে ৩-৫ মিটার করাই ভালো। এতে পরিচর্যা খুব ভালো হয়। ছিটিয়ে বীজ তলায় বীজ বপন করা হয়। ছিটিয়ে বীজ বপন করার জন্য প্রতি বর্গমিটার বীজ তলার জন্য ১০০-১৫০ গ্রাম বীজ লাগে। বীজ থেকে চারা গজাতে ৬-১৪ দিন লাগবে। শীতকালে টমেটো চাষের জন্য বীজ বুনতে হয় কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে। আবার পরবর্তীতে চাষের জন্য বীজ বুনতে হয় শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে। এভাবে প্রতিবছর টমেটো চাষের জন্য বীজ তৈরি করতে হই 

জমি এবংমাটি প্রস্তুত করা

এতক্ষণ আমরা জানলাম টমেটোর চারা তৈরি সম্পর্কে এখন আমরা জানবো জমি ও মাটি প্রস্তুত সম্পর্কে। টমেটো চাষে কিভাবে জমি ও মাটি প্রস্তুত করা হয় চলুন তা আজকে আমরা জেনে নিই

বেলে দোআঁশ মাটি টমেটো চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি। এছাড়া সব মাটিতে কম বেশি টমেটো চাষ হয়ে থাকে। টমেটো চাষ করার আগে অবশ্যই জমিতে তিন চার বার চাষ ও মই দিতে হবে। জমিতে কোন আবর্জন বা অপ্রয়োজনীয় গাছ থাকলে তুলে ফেলতে হবে। জমিতে বারবার চাষ ও মই দিয়ে মাটির উর্বর করতে হবে। এছাড়ও শেষ চাষের আগে মাটিতে টিএসপি দিয়ে মাটিতে চাষ ও মই দিতে হবে। মাটিকে ভালো ঝুরঝুরা করে ও আলগা করে নিতে হবে। মাটি ভালো হবে পরিচর্যা করে নিলে ফলন ভালো পাওয়া যায়। তাই ফলন ভালো করার জন্য অবশ্যই ভালো মাটিতে টমেটো চাষ করতে হবে।

চারা রোপন করা

এতক্ষণ আমরা চারা রোপন ও মাটি প্রস্তুত করা সম্পর্কে জানলাম এখন আমরা চারা রোপন করা সম্পর্কে জানব। বীজ থেকে  চারা গজানো হয়ে গেলে চারাগুলোকে তুলে মূল জমিতে বপন করতে হবে.১৪ থেকে২০ দিনের চারা গুল কে প্রতি বেডের দুই সারিতে লাগাতে হবে। সারি থেকেসারির দূরত্ব হবে ৬০ সেন্টিমিটার। এবং চারা থেকে চারার দূরত্বহবে ৪০ সেন্টিমিটার। প্রতি শতক জমিত.১৮০টি চারা লাগানো যায়।

টমেটো চাষ

এতক্ষণ আমরা জানলাম চারা রপন সম্পর্কে এখন আমরা জানবো চারা রোপন করার পর কিভাবে টমেটো চাষ করতে হয়। চারা রোপন করার পর টমেটো চাষ করতে হয়। এজন্য বীজতলায় বীজ বুনে চারা রোপন করতে হয়। টমেটো চাষের সফলতার জন্য বিজ ও ঘরে রাখা বিজ প্রথমে শোধন করে নিতে হবে। সম্ভব হলে বীজতলায় বুনার আগে অংকুরদ্গ্মোন পরীক্ষা করে নিতে হবে। বীজ শোধন করা যায় কয়েক পদ্ধতিতে। গরম পানিতে ভিজিয়ে বীজ শোধন করা যায়। কিছু গাছগাছড়ার রস দিয়েও বীজ শোধন করা যায়। এছাড়া ছত্রাক নাশক দিয়েও বীজ শোধন করা যায়।

আরো পড়ুনঃ হাইব্রিড বেগুন চাষ করে লাভজনক সম্পর্কে জানুন


 এভাবে বীজ তৈরি হয়ে গেলে জমিতে তৈরি করে রাখা বেডে একটা একটা করে চারা হালকা গর্ত করে বসিয়ে দিতে হবে চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৪০ সেন্টিমিটার। এভাবে প্রত্যেক বেডে ৪০ সেন্টিমিটার দূরত্ব করে চারা পুঁতিয়ে দিতে হবে। চারা বসানো হয়ে গেলে হালকা করে পানি দিয়ে দিতে হবে। এভাবে সপ্তাহে একদিন টমেটো গাছে পানি দিতে হবে। টমেটো গাছের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য টমেটো গাছে ঠেকনা দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি দুই সারির মধ্যে অ আকৃতির বাসের ফ্রেম তৈরি করে দিতে হবে।গাছ যেন অতিরিক্ত ঝোপলা না হয় এর জন্য অতিরিক্ত ডাল পালা কেটে দিতে হবে। জমিতে যদি আগাছা দেখা যায় তাহলে নাড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে নিতে হবে।


 চারা লাগানো.৬০ থেকে৯০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। কাচা ও পাকা উভয় টমেটো তোলা যাবে। প্রতি গাছ থেকে সাত থেকে ৮ বার টমেটো সংগ্রহ করা যায়। টমেটো ফলন প্রতি শতকে ৮০ থেকে ১০০ কেজি হতে পারে। টমেটো সংগ্রহ করার পর। দুই থেকে তিন দিন বাড়িতে নেই বিছিয়ে রাখতে হবে। তাহলে টমেটো গুলো আরো ভালোভাবে পেকে যাবে। এরপর টমেটো গুলো বাজারে বিক্রয় করার উপযোগী হয়ে যায়। তবে অবশ্যই ভালো ফলন পেতে গেলে গাছের পরিচর্যা নিতে হবে। গাছে পোকামাকড় ময়লা আবর্জনা গাছের থেকে দূরে রাখতে হবে। সময়মতো পানি ও সেচ দিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ টমেটো খাওয়ার উপকারিতা জানলে অবাক হবেন

 সার প্রয়োগ পদ্ধতি 

এতক্ষণ আমরা টমেটো চাষ সম্পর্কে জানলাম এখন আমরা জানবো টমেটো চাষে কি কি সার ইউরিয়া প্রয়োগ করা হয়। চলুন তাহলে আজকে আমরা এই আর্টিকেল জেনে নেই,  ইউরিয়া প্রতি শতকে ২ কেজি থেকে ২.৪ কেজি। টিএসপি প্রতি শতকে ১.৬ কেজি থেকে ২ কেজি। এম ওপি প্রতি শতকে ০.৮ থেকে ১.৬ কেজি ও গবর প্রতি শতকে ৩০ কেজি থেকে ৪৫ কেজি পর্যন্ত করতে হবে। অর্ধে গোবর সার ও সবটুকু টিএসপি সার শেষ চাষের আগে ছিটিয়ে দিতে হবে। অবশিষ্ট গোবর চারা লাগানোর পূর্বে গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি সার সমান দুই কিস্তিতে পার্শকুসি ছাটাই এরপর চারা লাগানোর তৃতীয় সপ্তাহ ও পঞ্চম সপ্তাহ পর রিং পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে হবে।


 ঘাটতি থাকলে জিপসম , জিংক সালফেট , বোরিক এসিড পাউডার ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারও প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও টমেটো চাষে বিভিন্ন ধরনের গাছের সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন ঢলে পড়া, মোজাইক ভাইরাস, কুকড়িয়ে যাওয়া , নাবি ধসা, আগাম ধসা , গোড়া ও মূল পর্চা ইত্যাদি ভাইরাস আক্রমণ হতে পারে। এছাড়াও যে সকল গাছ গুলোতে একদম অতিরিক্ত ভাইরাস বা কুকড়িয়ে যায় সে সকল গাছ গোড়াথেকে উপড়ে ফেলাই ভালো। যে সকল গাছ গুলোতে হালকা করে রোগ দেখা দিবে তখন অবশ্যই বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিয়ে গাছ গুলোকে বিশ বা সার দিতে হবে।

টমেটো চাষে এ লাভজনক হওয়া

এতক্ষণ আমরা টমেটো চাষ থেকে শুরু করে টমেটো সংগ্রহ পর্যন্ত জানলাম। এভাবে টমেটো পরিচর্যা করতে হবে ও ভালো টমেটো ফলন পেতে হলে সময় মত সেচ ওহ পানি প্রয়োগ করতে হবে। সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে জমিতে সার বিষ কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। টমেটো ভালো হলে উন্নত জাতের হলে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। বিশ্বে সকল দেশের এই টমেটো চাহিদা রয়েছে। এটি সবার অনেক পছন্দের একটি সবজি। যার কারণে এটি বৈদেশিক ভাবে আমদানি ও রপ্তানি করা হয়। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার জন্য অবশ্যই ভালো ফলন ফোলাতে হবে। 


আমাদের দেশে অনেকেই এই টমেটো চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছেন। তাই ভালো জাতের টমেটো চাষ করতে হবে ও পরিচর্যা করতে হবে। টমেটো চাষ অনেক সহজ পদ্ধতি কম খরচে টমেটো চাষ করা যায়। জমি ঠিকভাবে পরিচর্যা করলে জমির মাটি পরীক্ষা করে নিতে হবে। এতে ফলন ভালো পাওয়া যাবে। ভালোভাবে পরিচর্যা নিলে খুব তাড়াতাড়ি ফলন পাওয়া যাবে। এবং দ্রুত বাজারে বিক্রি করে। শীতকালে টমেটো চাষের জন্য অনেকেই আগ্রহী এবং ক্রেতারা কেনার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠেন। শীতকালে টমেটো চাষ করা অনেক লাভজনক।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url