বকুল ফুল ও ফলের ঔষধি গুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন,

বকুল ফুলের গাছ যা আমরা অনেকই পরিচিত। এটি বাংলাদেশের অনেক প্রচলিত একটি গাছ। যা অনেকের বাড়িতে বা গ্রাম অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। তবে আমরা জানি না বকুল ফুল ও ফলে কত ঔষধি গুন রয়েছে। চলুন তাহলে আজকে আমরা সে বিষয়ে আলোচনা করে জেনে নিই বকুল ফুল ও ফল আমাদের জন্য কত উপকারী। ।

আপনারা এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়লে অবশ্যই বুঝতে পারবেন বকুল ফুল ও ফল আমাদের জন্য কত উপকারী। চলুন তাহলে আমরা দেরি না করে বকুল ফুল ও ফল এর ঔষধি গুণ সম্পর্কে জেনে নিই।

পোস্ট সূচিপত্রঃবকুল ফুল ও ফলের ঔষধি গুন সম্পরকে বিস্তারিত জানুন,

  • বকুল ফুল ও ফল সম্পরকে
  • বকুল ফুল ও ফলের ভেষজ গুনাগুন
  • বকুল ফুল ও ফলের উপকারিতা
  • বকুল ফুলের ব্যবহার
  • শেষ কথা

বকুল ফুল ও ফল সম্পরকে

বুক ফুল আকারে খুব ছোট হয়। আকারে বড়জোর এক সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। দেখতে ছোট  ছোট তারার মত ফুল গুলো যখন ফোটে তখন গাছের চেহারা হয় অন্যরকম। এবং মাটিতে যখন যখন ঝরে পড়ে তার দৃশ্য নয়নভিরাম। বকুল ফুল ছোট তারার মত হলুদ ভাব সাদা ক্রিম এর মত রঙের হয়। এই ফুল রাতে ফোটে এবং সারাদিন টুপটাপ ঝরে পড়তে থাকে। ভারী সুগন্ধি এই বকুল ফুল। শুকনো বকুল ফুলের গন্ধটা বেশ কয়েকদিন ধরে থাকে। এই ফুলের মালা গেথে বেশ কয়েকদিন ঘরে রেখে দিলে অনেক সুগন্ধি বের হয়।

বকুল গাছের ছোট ছোট কুলের মত ডিম্বাকৃতির ফল হয়। ফলগুলো কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকা অবস্থায় কুলের মতো লাল রঙ ধারণ করে। পাখির পাকা বকুল ফল খেয়ে থাকে। অনেক সময় বা অনেকেই বাচ্চাদের এই পাকা বকুল ফল খাওয়ান। ফলের স্বাদ হালকা কষ যুক্ত হালকা মিষ্টি। বকুল ফল গাছে আসে বর্ষাকালে। এই ফলটি পাকা অবস্থায় দেখতে অনেক আকর্ষণীয়। বকুল ফলের ভেতর দুইটা বীজ থাকে। এই দুই থেকে বীজ থেকে অনুদায়ী তেল পাওয়া যায়।

বকুল ফুল ও ফলের ভেষজ গুনাগুন

এতক্ষণ আমরা বকুল ফুল ও ফল সম্পর্কে জানলাম, এখন আমরা বকুল ফুল ফলের ঔষধি গুণ সম্পর্কে জানব চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক,

শুক্রতারল্যঃ দীর্ঘদিন অজীন্যতাই ভুগছেন তাদের শুক্রতারল্য হয়, আবার শরীরে পুষ্টির অভাবেও শুক্রতারল্য হয়। যেসবরোগীদের শুক্রতারল্য হয় তাদেরকে পাকা বকুল ফলের রস খেতে হবে

শ্বেত রোগঃ সব শ্বেতীর  রঙ এক হয় না, যার রং দুধের মত সাদা হয়ে গিয়েছে সেগুলোকে দুঃসাধ্য বলা যেতে পারে। আর এই রকম সাদা দাগ মেদসবী লোকদের বেশি হয়ে থাকে অর্থাৎ রোগা লোকের এইরকম সাদা দাগ বেশি হবে না । আর যে দাগগুলি বেশি লালটে বা তামাটে রঙের যেগুলো অনেকের হতে পারে। এই ক্ষেত্রে বকুল গাছের ছালবেটে ঘন কাথ করতে হবে এবং তাতে বকুল ফলের বীজ বেটে দিতে হবে। এরপর ওই দাগে আস্তে আস্তে ঘষতে হবে। এর দ্বারা ওই দাগগুলি আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাবে।

দাঁতের পোকায়ঃ দাঁতের মাঝে গর্ত হয়ে যায় অথচ ধার ঠিক থাকে এক্ষেত্রে বকুল ছাল ১০ গ্রাম নিয়ে থেঁতো করে চার গ্লাস পানির সঙ্গে সেদ্ধ করতে হবে। এক কাপ অবশিষ্ট থাকতে নামিয়ে নিতে হবে। এরপর ছেকে নিয়ে সকাল ও রাত প্রতিদিন দুই বার মুখের মধ্যে নিয়ে ১৫ থেকে ১০ মিনিট রেখে ফেলে দিতে হবে। এরকম ১০ থেকে ২০ দিন একটা ব্যবহার করলে দাতে আর পোকা থাকবে না। এটি ছাড়া অকালে যাদের দাঁত নড়ে যায় তারাও এটি ব্যবহার করতে পারে।

মাথার যন্ত্রণাঃ যখন ঠান্ডা লাগার কারণে সর্দি বা কফ জমে যায় এরপর মাথা ব্যথা শুরু হয  এই মাথাব্যথা নিয়ন্ত্রণে এই পদ্ধতি শুধু কাজ হবে। বকুল ফুলের গুড়ো বা চূর্ণ ৮ ভাগের ১ ভাগ ফিটকিরির গুরো মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। যাদের সর্দি ও কফ বসে মাথা ব্যাথা শুরু হয় তারা এই গুড়োর নাস্যিটা ব্যাবহার করবেন। তাহলে মাথা যন্ত্রণা সেরে যাবে। 

দাঁত পড়াঃ অল্প বয়সে যাদের দাঁত নড়ে যাচ্ছে বা পড়ে যাচ্ছে তারা প্রতিদিন বকুল ফল চেপে খেতে পারেন। এটা দেখবেন দাঁতের মাড়ি অনেক শক্ত হয়েছে বা দাঁত পড়ে যাচ্ছে না। এছাড়া কাঁচা ফল পেড়ে শুকিয়ে গুঁড়ো করলে সে গুঁড়ো দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত নড়বেও না অল্প বয়সে দাঁত পড়েও যাবে না।

নাসা জ্বর ঃ এই জ্বর সাধারণত মাথাব্যথা ও ঘাড়ের ব্যথা হয়ে থাকে। এছাড়াও শরীরের ব্যথা বা অন্যরকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এক্ষেত্রে বকুল ফুলের  চূর্ণের  নস্য দিলে এই অসুবিধা দূর হয়ে যায় ।

শিশুদের কষ্ঠবদ্ধতায়ঃ বকুল বিজের অভ্যন্তর শাস টাকে বাদ দিয়ে শক্ত অংশটি কে মিহির চূর্ণ করে পুরাতন ঘি এর সঙ্গে মিশিয়ে এক ধরনের বাতি তৌরি করে অথবা পানের বোটাই করে শিশুর মলদ্বারে দিলে ১০ থাকে ১৫ মি.এর মদ্ধে দাস্ত হয়ে যায়। তারপর কোন স্নেহ জাতীয় দ্রব্য যেমন নারিকেল তেল বা ঘী লাগিয়ে দিতে হবে। তাতে বিজের চূর্ণ টা মিশিয়ে দিতে হবে

পুরাতন আমাশা রোগঃ প্রতিদিন কয়টা করে পাকা বকুল ফুল এর  শাঁস খেলে এ রোগ এর উপশম হয়।

বকুল ফুল ও ফলের উপকারিতা

এতক্ষন আমরা বকুল ফুলের ভেষজ গুনাগুন সম্পর্কে জানলাম এখন আমরা বকুল ফুল ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানব, তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক বকুল গাছ আমাদের জন্য কি কি উপকারে আসে,

১) বকুল পাতার রস চোখের জন্য অনেক উপকারী

২) মাথা ব্যাথা বকুল পাতা সেদ্ধ করে মাথায় দিলে উপশম পাওয়া যাবে

৩) শুকনো বকুল ফুলের গুরা তেলের সাথে মাথায় ব্যবহার করলে মাথা ঠাণ্ডা রাখে।

৪) শুকন  বকুল ফুলের গুড়া গুড়া তেলের সাথে মাথায় ব্যবহার করলে মেধা শক্তি বাড়াতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। 

৫)  হৃদযন্ত্রের অসুখ লিউকোরিয়া, মনোজরিয়া, নিরাময়ে বকুল ফুলের রস ব্যবহার করা হয়।

৬) মাথা ব্যথা কমাতে শুকনো বকুল ফুলের গুড়া নাক দিয়ে নিশ্বাসের সাথে টেনে নিন উপকার পাবেন।

৭) যাদের প্রসাবের সমস্যা রয়েছে। তারা ১০ গ্রাম বকুলের ছাল ছেঁচে১ পোয়া পানিতে সেদ্ধ করে তার অর্ধেক করে ভালো করে ছেকে দিনে এক চামচ করে তিনবার পান করুন। এভাবে ১৫ থেকে .২০ দিন পান করলে উপকার পাওয়া যাবে।

বকুল ফুলের ব্যবহার

এতক্ষণ আমরা বকুল ফুল ও ফল এর উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম এখন আমরা এর ফুল ফল বকুল গাছ অন্যান্য কি কাজে ব্যবহার করা যায় তার সম্পর্কে জেনে নিব, চলুন তাহলে দেরি না করে জেনে নেই,

ভারতের এই ফুল দিয়ে তৈরি তরল সুগন্ধি হিসাবে ব্যবহার এ প্রচলন রয়েছে।

বকুল ফল পাকা খাওয়া যায়। অনেকেই এই ফল সংগ্রহ করে শুকিয়ে আচার তৈরি করে।

ফুল দিয়ে মালা গাথার প্রচলন অনেক আগে থেকেই পুরনো দিন থেকেই চলে আসছে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন এলাকার নারীরা এই ফুল মালা পড়ে সৌন্দর্য বর্ধনে জন।

 অনেক এলাকায় বকুল গাছের কান্ড বা নরম ডাল দাঁত মাজার জন্য ব্যবহার করা হয়।

বকুল কাটা দামী ও দুষ্প্রাপ্য কাঠ। এই কাঠ অনেক শক্ত ও কঠিন হয়। কিন্তু কাটতে অনেক সুবিধা হয়। এমন খুব সহজে পালিশ করা যায়। এই কাঠের রং গাড়ো লাল। এই কাঠ ঘর বাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। 

আরো পড়ুনঃ মরিয়ম ফুল সম্পর্কে জেনে নিন

শেষ কথা

আমরা এতক্ষণ বকুল ফুল ও ঔষধি গুণ সম্পর্কে বা আরো অনেক ধরনের বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে জানলাম, আশা করি আপনারা আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে বকুল ফুল ও ফল সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। বকুল ফুল আমাদের জন্য অনেক উপকারী। এটি আমাদের অনেক অসুখের সমস্যার সমাধান করে। আপনাদের যদি আর্টিকেলটি পড়ে আরো কিছু জানার থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url