ইসলামের দৃষ্টিতে বিড়াল লালন পালন করা জায়েজ আছে কি না
পোষা প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে শান্ত সৃষ্ট প্রাণী হলো বিড়াল। আর সে যেন বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা রেখে প্রতিবছর ৮ আগস্ট বিড়াল দিবস উদযাপন করা হয়। ইসলামে এভাবে দিবস ঘিরে বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা রেখে প্রদর্শনের নিয়ম না থাকলেও নবীজি (সাঃ) ও সাহাবায়ে- কেরামরা বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করেছেন।
আল্লাহ রাসূল (সাঃ) যখন ওযু করতেন তখন তিনি নিজের অজুর পাত্র থেকে বিড়ালকে পানি পান করাতেন। চলুন তাহলে এখন আমরা এই আর্টিকেল থেকে বাড়িতে বিড়াল লালন পালনে জায়েজ যা আছে কিনা তার সম্পর্কে জেনে নেই।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ইসলামের দৃষ্টিতে বিড়াল লালন পালন করা জায়েজ আছে কিনা
- ইসলামের দৃষ্টিতে বিড়াল লালন পালন
- কালো বিড়াল সম্পর্কে
- বিড়ালের পালার ক্ষতিকর দিক
- বিড়ালের উপকারিতা ও অপকারিতা
- নবীজির বিড়ালের নাম
ইসলামের দৃষ্টিতে বিড়াল লালন পালন
ইসলামের দৃষ্টিতে বিড়াল পালনের কোন অসুবিধা নাই। তবে বিড়াল এর পর্যাপ্ত খাদ্য পানি খাওয়াতে হবে। বিড়ালের প্রতি যথাযথ দয়া ও ভালবাসা অনুগ্রহ দেখাতে হবে। বিড়ালকে কোন ধরনের কষ্ট দেওয়া যাবে না। তবে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে বিড়াল কোথাও পবিত্র বা নোংরা করলে সেটা যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নকরে নেওয়া হয়। বিড়ালের উপর কোন ধরনের অবিচার হলে গুনাহগার হতে পারে। হাদিসের বর্ণিত হয়েছেঃ-
এক মহিলাকে একটি বিড়ালের জন্য আজাব দেওয়া হয়েছে। কারণ বিড়ালটিকে আটকে রাখা হয়েছিল এবং বিড়ালটি মারা গিয়েছিল। ফলে মহিলাটি জাহান্নামী গিয়েছে। বিড়ালটিকে আটকে রেখে খাবার পানি কিছুই দেননি। এবার ছেড়েও দেয়নি যাতে করে জমিনের পোকামাকড় কিছু না খেতে পারে।(মুসলিম , হাদিস-৫৭৪৫)
পশু পাখি সহ আল্লাহর তায়ালার যেকোনো সৃষ্টির প্রতি দয়া করলে মহান আল্লাহ দোয়া করবেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেনঃ-
দয়াবান এর উপর দয়াময় আল্লাহ দোয়া করেন। তোমরা জমিনের অধিবাসীদের উপর দয়া কর, তাহলে যিনি আসমানে আসছেন তিনিও তোমাদের উপর দয়া করবেন।(সুনান আবু দাউদ, হাদিস-৪৯৪১)
আরেকটি হাদিসকে বর্ণিত হয়েছে, সাহাবীরা বলেছেন ,হে আল্লাহর রাসূল পশু পাখিদের মধ্যেও কি আমাদের সোওয়াব রয়েছে, তিনি বলেছেন প্রতিটি জীবন্ত পশু পাখির জন্য সওয়াব রয়েছে।(বুখারী হাদিস ৩৪৬৭ মুসলিম হাদিস ২২৪৫)
তাহলে আমরা এই থেকে বুঝতে পারলাম ইসলামের দৃষ্টিতে বাড়িতে পরশু পাখি সহ বিড়ল করা লালন পালন করা যায়। বাড়িতে বিড়াল পালনে জায়েজ রয়েছে।
কালো বিড়াল সম্পর্কে
এ সময় ডিজিটাল ডেস্ক। অলৌকিক অশুভ, ভৌত কোন কিছু বিবরণ দিতে গেলেই এই কালো বিড়ালের নাম উঠে আসে। অনেকেই এই কালো বিড়াল স্মরণ করেন। বহু দিন ধরে ব্যবহার চলে আসছে। অনেক প্রখ্যাত লেখক ও তাদের বিভিন্ন গল্প কবিতা কাহিনীতে কালো বিড়ালকে বিভীষিকার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। কালো বিড়াল রাস্তা দিয়ে পার হলে এখনো গাড়ি থামিয়ে দেওয়া প্রচলন রয়েছে। কালো বিড়াল কেন অশুভ প্রতীক চলুন তা আমরা জেনে নিই,
এর পেছনে কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গিয়েছে আসলেই পুরো ব্যাপারটাই একটা ভ্রান্ত ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। বিড়ালের রং কালো হওয়ার কারণে অশুভর কোন সম্পর্ক নেই। পুরোটাই কুসংস্কার। কিন্তু কালো বিড়াল নিয়ে কি ভাবে দানা বাঁধলে বিশ্বাসে ৩০০০ খ্রিষ্ট পূর্বাদে ইজিপশিয়ানরা বিশ্বাস করতো কালো বিড়ালের মধ্যে আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে। তারা কালো বিড়াল কে পূজা করত। কালো বিড়াল কে মেরে ফেলা বা আঘাত করা শুভ হিসাব গণ্য করতে ইজিপশিয়ানরা। কিন্তু পরবর্তীতে যখন এই প্রসঙ্গ ইউরোপে আসে তখন কথাটির অর্থ পুরোটাই বদলে যায়।
১৫৬০ সালে ইউরোপরা বিভিন্ন উপকথাই কালো বিড়ালটি কুসংস্কার বলতে শুরু করে। ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জন্মায় সত্যি হয়তো কালো বিড়ালের মধ্যে অপয়া শক্তি রয়েছে। অনেকেই মনে করে কালো বিড়ালে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার রয়েছে তবে ইসলাম ধর্মে এই কথাটি গণ্য করা হয় না। ইসলাম ধর্মে এটি কোন হাদিসে নাই যে কালো বিড়াল কুসংস্কার।
আরো পড়ুনঃ ইসলামের দৃষ্টিতে আতর অথবা পারফিউম ব্যবহার সম্পর্কে
বিড়ালের পালার ক্ষতিকর দিক
বাড়িতে বিড়াল পাললে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে, আমরা অনেকেই জানিনা কি কি ক্ষতি হতে পারে চলুন তাহলে আজকে আমরা জেনে নেই কি কি ক্ষতি হতে পারে, যারা বাড়িতে বিড়াল পালেন তারা সবসময় সতর্ক থাকবেন। বৈজ্ঞানিকরা বিড়ালের মধ্যে এমন এক ধরনের জীবাণু খুঁজে পেয়েছেন যা থেকে হতে পারে সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিসঅডারের মতো এক ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। আশঙ্কার বিষয় হলো কিছু কিছু বিড়ালের শরীরে এ জীবাণু থাকতে পারে। ফলে পোষা বিড়ালের কাছ থেকেই কেমন মারাত্মক আসক্ত রোগে আশঙ্কা থাকে শিশু কিশোরদের। বিড়াল নখ দিয়ে আঁচড় দিলে অনেকেই এটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান।
শরীরে ক্ষতি হতে পারে কিনা বা কোন রোগে আক্রান্ত হতে পারে কিনা এগুলো নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তা করেন। তবে বিড়ালে আচর দিলে বয়স্কদের তেমন সমস্যা হয় না তবে শিশু বাচ্চাদের আঁচর দিলে জ্বর আসতে পারে এছাড়াও খশকা পড়তে পারে বা পেটে ব্যথা হতে পারে সমস্যা দেখা দিলে ডক্টরের পরামর্শ নিতে হবে। তবে বিড়াল কামড় দিলে যদি শরীরে অন্যরকম সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই ডক্টরের কাছে পরামর্শ নিয়ে টিকার ব্যবস্থা করতে হবে। পরামর্শ নিয়ে টিকা না দিলে জলাত্মক রোগ হতে পারে। তাই বিড়ালের কাছে হতে সাবধান থাকতে হবে। বিড়ালের আঁচড় বা কামড়ে সাবধান থাকতে হবে সতর্ক থাকতে হবে শিশু বাচ্চাদের কাছ থেকে বিড়ালকে দূরে রাখতে হবে।
বিড়ালের উপকারিতা ও অপকারিতা
এখন আমরা বিড়ালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানব চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক,
বিড়াল অনেক বন্ধুসুলভ প্রাণী। গৃহ পালিত প্রাণী খুব তাড়াতাড়ি মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। বিড়াল অনেক শান্ত ও নিশ্চুপ প্রাণী যার কারণে অনেকেই এটি পছন্দ করেন ।অনেকেই শখ করে এটা পুষে থাকেন। একটি দুইটি তারও বেশি শখ করে পুষে থাকেন। অনেকেই বিড়াল পছন্দ করেননা। হবে জানেন কি যারা বিড়াল পছন্দ করেন তারা শারীরিকভাবে অন্যদের তুলনায় বেশি সুস্থ থাকেন। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে বিড়াল পুষলে। জেনে নেওয়া ঘরে বিড়াল পুষলে কি কি উপকার পাওয়া যায়ঃ-
- কিছু গবেষণায় দেখা গেছে বিড়াল পুষলে মানসিক চাপ কমে। ফলে হৃদরোগে ঝুঁকি কমে। ছাড়াও এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা বিড়াল পোষেন তাদের অন্যদের তুলনায় হৃদরোগের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ কম।
- বিড়ালের মিউ মিউ ডাক সে সবচেয়ে ধবনী গুলোর একটি। যা শরীরের পেশির অস্থির প্রদাহে নিরাময়ে থেরাপির মতো কাজ করে।
- গবেষণায় বলেছে বিড়ালের উপস্থিতিতে ঘুম আরো ভালো হয়।
- বিড়াল গবেষক ডক্টর জুন ম্যাক নিকোলাসের গবেষণা অনুসারে যে সকল পুরুষ বিড়াল পোষেন সেসব পুরুষদের উপর নারীরা বেশি আকৃষ্ট হয়।
- ২০০৮ সালে এক গবেষণা অনুসারে দেখা গেছে বিড়াল কুকুরের চেয়ে কম খায়। এবং বিড়াল ইঁদুর তাড়াতে সাহায্য করে।
- যে ব্যক্তি বিড়াল পোষে সে ব্যক্তি স্মার্ট হয়ে থাকে। কারণ তার ব্যস্ততার মাঝেও বিড়ালের যত্ন নেই। এবং তারা নিজের প্রতিও যত্নবান হয়ে ওঠেন
- বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত আছে বিড়াল ঘরে থাকলে অশুভ আত্মা সেখানে প্রবেশ করতে পারেন না। রাশিয়ার অঞ্চলে এটি এখনো প্রচলিত রয়েছে।
- আপনারা অবসর সময় খুব ভালো সঙ্গী হতে পারে। যা আপনার আনন্দ ও প্রশান্তি এনে দিতে পারে
নবীজির বিড়ালের নাম
বিড়াল অপবিত্র না এইটা আমাদের আশেপাশের ঘোরাফেরা করে। বিড়াল আমরা লালন পালন করতে পারি এটা কোন গুনাহ নাই যখন আমরা জেনে নেব। চলুন এখন আমরা জেনে নিব হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বিড়ালের নাম কি ছিল। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে একটি বিড়াল দেখতে পান। সেখান থেকে তিনি বিড়াল টিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন সেটি ছিল সাদা কালো রঙের আবিসিনিয়ান। নবীজি সেই বিড়ালটির নাম রেখেছিলেন মুয়েজ্জা। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু বিড়াল পালন করতেন তা হাদিস দারাই প্রমাণিত। এছাড়াও রাসুল(সাঃ)সাহাবীদের বিড়াল পালন করতে উৎসাহ দিয়েছেন। এবং বিড়ালের প্রতি সদয় ব্যবহার ও তাদের খাবার দাবারের উপর নজর দেওয়ার নির্দেশ করেছেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url